আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে দীর্ঘ আট বছর লেগেছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের। তাও হয়েছে তোড়জোড়ের মাধ্যমে। এতে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসার যোগ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থান দেওয়া হয়েছে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের। এর মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ী, পিয়ন, অছাত্র, বিবাহিত আর প্রবাসীরাই বেশি আলোচনায়। গত ৩০ নভেম্বর ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে মুখর থেকে মামলা-হামলা এবং জেলে যাওয়া কর্মীরা পদবঞ্চিত হয়েছেন। ২৭২ সদস্যের কমিটিতে কমপক্ষে ১৮০ নেতা অছাত্র এবং বিবাহিত ৮০ জন। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হলোÑ নগর ছাত্রদলের সহসভাপতি করা হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্মসম্পাদক সঞ্জয় মল্লিককে।
পদপদবি নিয়ে বাণিজ্যের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ ত্যাগী ও মাঠের নেতাকর্মীদের। তাই মামলা-হামলা ও ১০ বছর ধরে মাঠে থাকা নেতাকর্মীরা কমিটিতে স্থান পাননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পদবঞ্চিতরা মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেন। তারা বলছেন, মহানগর বিএনপির এক নেতার ইঙ্গিতে একপক্ষের তালিকা অনুযায়ী বিতর্কিত এই কমিটি দেওয়ার পেছনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একজন নেতা। ওই নেতা মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে কেন্দ্রকে দিয়ে কমিটিটি পাস করিয়েছেন। যদিও নেতাদের দাবি, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে ১০ দিনের জন্য কমিটিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন কমিটির যুগ্মসম্পাদক মোহাম্মদ হাসান ও মোহাম্মদ হোসেন সিআরবিতে চাকরি করছেন বলে জানা গেছে। সম্পর্কে তারা সহোদর। প্রচার সম্পাদক কামরুল হাসান আকাশ ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের তিন পিয়নও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। ইয়াবা নিয়ে কুমিল্লায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার শফিকুর রহমানও রয়েছেন নতুন এ কমিটিতে।
গাজী মো. সিরাজউল্লাহকে সভাপতি এবং বেলায়েত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২১ জুলাই। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান যুগ্মসম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল। আর গাজী মো. সিরাজ নগর বিএনপির যুগ্মসম্পাদক, বেলায়েত হোসেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম রাশেদ খান নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হয়েছেন। অর্থাৎ প্রথমে নেতৃত্বে পাওয়া কমিটির সহসভাপতি জসিম উদ্দিন ছাড়া বাকিরা বিএনপি, যুবদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্বে। আবার তাদের দিয়ে চলছে নগর ছাত্রদলেরও কার্যক্রম।
জানা গেছে, সম্প্রতি ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন কমপক্ষে ১২ প্রবাসী। এর মধ্যে যুগ্মসম্পাদক এইচএম সাজেদুল ইসলাম অনিক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। আট বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে। অন্যরা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। কমিটিতে ৮০ নেতাই বিবাহিত। অছাত্রের সংখ্যা কমপক্ষে ১৮০ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ঠিকাদার, ওষুধ ও কাপড়ের ব্যবসায়ী, ওষুধ কোম্পানির এমআর, পেশাদার সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীও রয়েছেন। এসএসসি পাস করেননি এমন নেতা রয়েছেন সাতজন। গরমিলও আছে বেশÑ কমিটিতে সত্যজিত বড়–য়া রূমুকে করা হয়েছে সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। আবার সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদেও রয়েছে তার নাম।
নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ বলেন, ‘২০১৩ সালে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তখন বিপুলসংখ্যক কর্মী মাঠে ছিলেন। মূলত তাদের মূল্যায়ন করতেই ১০ দিনের জন্য কমিটিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটিতে বড় পদে জুনিয়র আবার ছোট পদে সিনিয়ররা এসেছেন। ফলে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। আশা করি পরের কমিটি সুন্দর হবে।’
Leave a Reply